Freelance Jobs

বুধবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৫

আমার নেপাল ভ্রমণ

পূর্বকথন...
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে কার না ভাল লাগে ! এর আগে দেশের ভেতরে অনেক ঘোরাঘুরি হলেও ছাত্রজীবনের গণ্ডি না পেরোনোয় খরচের ভয়ে দেশের বাইরে যেতে সাহস করিনি কখনো । এবার বন্ধু জাভেদ যখন পাশের দেশ ভারতে ঘুরে আসার পরিকল্পনা প্রকাশ করলো, বাজেট দেখে বেশ উৎসাহ বোধ করতে লাগলাম । ঠিক হলো, পরের ছুটিতেই দিন পনেরোর জন্য ঘুরে আসবো এ, আর, রহমান আর এ, পি, জে, আবদুল কালামের দেশে । পরীক্ষা শেষে ছুটি আসবে জানা ছিল । কিন্তু পরীক্ষা কখন শুরু বা শেষ হবে তা জানা ছিল না । কাজেই অনলাইনে ভারতের ভিসা ফরম পূরণ করে ফেললেও অনিশ্চয়তার পরীক্ষা যখন শেষ পর্যন্ত শুরু হলো, দেখা গেলো, যে সময়ের জন্য আমরা ভিসা পাচ্ছি, তখনো আমাদের পরীক্ষা শেষ হবে না । কাজেই ভিসা ফরম জমা দেয়ার দিন আমরা আর জায়গামতো হাজির হলাম না । দেশের বাইরে যাবার এমন একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, ভাবতেই কিছুদিনের জন্য মন খারাপ হয়ে গেল । কিন্তু এবারো জাভেদ ত্রাণকর্তার ভূমিকায় নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হল । ঠিক হলো, দেশের বাইরে যাওয়া হবে ঠিকই; তবে ভারত নয়, ভারতের প্রতিবেশি দেশ নেপালে ।

কারণ নেপালে “অন-অ্যারাইভাল ভিসা” পাওয়া যাবে, আর খরচ একটু বেশি হলেও একেবারে সাধ্যের বাইরে নয় । কাজেই মজার ব্যাপার এই যে, প্রথম বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনায় কী দেখা হবে, তার চেয়ে কত সহজে আর কম খরচে ঘুরে আসা যাবে সেটাই আমাদের কাছে প্রাধান্য পেল ।যাবার প্রস্তুতি...বাংলাদেশি একটা এয়ারলাইনের টিকেট কেটে আনলাম । পাসপোর্ট আগেই ছিল, তাতে কিছু ডলার এন্ডোর্স করিয়ে নিলাম । গুগোল করে দেখলাম তাপমাত্রা এই সময় বাংলাদেশের মতোই, কাজেই গরম কাপড় আর নিলাম না । সাতদিনের ভ্রমণ, কাজেই খুব বেশি প্রস্তুতির দরকার ছিল না । আগে কখনো সানগ্লাস ব্যবহার করিনি, কিন্তু প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একটু ভাব আনা লাগতে পারে- এই ভেবে একটা সানগ্লাস কিনে নিলাম । আমার গরিবি পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুট ক্যামেরার জন্য ব্যাটারি নিয়ে নিলাম । ঠিক হলো, প্রথমে কাঠমুন্ডু যাওয়া হবে । সেখানে দুদিন থেকে পোখরা যাব । সেখানে আরও দুদিন থেকে আবার কাঠমুন্ডু ফিরব । আর দেশে আসার আগে একদিন নাগরকোট ঘুরে আসব ।

যাবার পথে...
নির্ধারিত দিন দুপুরেই যার যার বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম । ফ্লাইট বিকালে । সব মিলে আমরা পাঁচজন যাচ্ছি, সবারই প্রথম বিমান ভ্রমণ । আমাদের উৎসাহ ছিল দেখার মতো । ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু বিমানপথে সরলপথে প্রায় ৬৭৫ কিমি । ইমিগ্রেশন, চেকিং পেরিয়ে আমাদের ATR-72বিমানে চড়ে বসলাম । এক ঘণ্টার ফ্লাইট । বাংলাদেশের উপর দিয়ে উড়ে যাবার পথে প্রথমবারের মতো নিজ চোখে মাতৃভূমির অপার সৌন্দর্য উপর থেকে উপভোগ করলাম । পুরো দেশটা সবুজে ভরা, আর যেন পানির উপর থইথই করে ভাসছে । মেঘের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় মনে হচ্ছিল কোনো অলৌকিক জগতের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছি । আর শেষদিকে হিমালয় রেঞ্জের বরফের পাহাড় পেরিয়ে যাবার সময় মেঘ আর পাহাড়চূড়ার বরফের উপর সূর্যের প্রতিফলিত আলো যে অপার্থিব সৌন্দর্যের অবতারণা করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় । একদম ঠিক সময়ে আমরা পাহাড়ের কোলে অবস্থিত কাঠমুন্ডু উপত্যকার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম । ছোট হলেও এয়ারপোর্টটি বেশ ছিমছাম । নেমেই ফরম পূরণ করে পনের দিন মেয়াদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেলাম ।

নেপাল পরিচিতি...
এইবেলা নেপাল সম্পর্কে কিছু না বললেই নয় । দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট দেশটা সারা দুনিয়ার কাছে এক নামে এভারেস্টের দেশ বলে পরিচিত । হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দেশটার অন্য পরিচয়গুলা হচ্ছে এটা গৌতম বুদ্ধের জন্মভুমি, আর মন্দিরের দেশ, পাহাড়ের দেশ । নেপাল এখনো অনুন্নত একটা দেশ, যাদের মাথাপিছু জিডিপি (নমিনাল) হচ্ছে ৭৪৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশের ১০৪৪ ডলার, ২০১২ এর হিসাব) । আয়তনে নেপাল প্রায় বাংলাদেশের সমান (মাত্র ৩৮৯ বর্গ কিমি ছোট) হলেও নেপালের জনসংখ্যা মাত্র পৌনে তিন কোটি । প্রধান ভাষা নেপালি, তবে মোটামুটি সবাই খুব ভাল হিন্দি জানে (নেপালিদের ভারত যেতে নাকি ভিসা লাগে না), আর পর্যটকের দেশ হওয়ায় কাজ চালানোর মতো ইংরেজি বেশিরভাগই বুঝতে পারে । নেপালিরাও আমাদের মতো ভাত, শাক, মাছ, আর ডাল খায়, তবে মাংস বলতে প্রায় সবই দেখলাম শুকরের মাংস । এছাড়া মুরগি, খাসির মাংস তো আছেই, কিন্তু গরুর মাংস নেই । নেপালে গরু খুবই পবিত্র একটা প্রাণি । গোহত্যা এখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ (এজন্য জেল-জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে) ।দক্ষিণে অল্পকিছু সমতল বাদ দিলে পুরো দেশটাই পাহাড়আর পর্বতে ভরে আছে । এজন্যই সারা বিশ্বের পর্বতারোহীদের তীর্থস্থান এই দেশ । পাহাড়- পর্বতের মাঝে আছে উপত্যকা (অপেক্ষাকৃত নিচু, সমতল এলাকা) ।এরকম উপত্যকাতেই গড়ে উঠেছে নেপালের প্রধান দুটি শহর কাঠমুন্ডু আর পোখরা ।    হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় এখানের নদীগুলো প্রচন্ড খরস্রোতা । বিশ্বের গভীরতম উপত্যকাটি (gorge) নেপালেই অবস্থিত ।

কাঠমুন্ডুতে...
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বন্ধু রাশেদ কিছু ডলার ভাঙিয়ে নিল । তারপর একটা মাইক্রোবাস নিয়ে আমাদের থাকার জায়গা পাকনাজলের একটা গেস্ট হাউজে চলে আসলাম । রাত হয়ে আসায় কাঠমুন্ডু শহর তখন ভাল করে দেখা গেল না । তবে যেটুকু দেখা গেল, তাতে মনে হল রাজধানী আর সবচেয়ে বড় শহর হলেও এটা ঢাকার মতো উন্নত না, অনেকটা বাংলাদেশের কোন জেলা শহরের মতো বলা যেতে পারে ।কাঠমুন্ডুতে কাঠমুন্ডু উপত্যকাটি আসলে তিনটা শহর নিয়ে গড়ে উঠেছে- ভক্তপুর, কাঠমুন্ডু আর ললিতপুর । পনের শতকের আগ পর্যন্ত রাজধানী ছিল ভক্তপুর । পুরো উপত্যকাই দর্শনীয় স্থাপনায় বোঝাই । সব মিলিয়ে এখানে সাতটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে ।পরদিন আমরা সারাদিনের জন্য একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে কাঠমুন্ডু শহর ঘুরতে বের হলাম । পুরো শহরটাই মন্দিরে বোঝাই, যার মধ্যে বিখ্যাত মন্দিরগুলোর স্থাপত্য আর কারুকার্য দেখার মতো । প্রথমেই আমরা গেলাম বৌদ্ধনাথ স্তুপা (মিনারের মতো উঁচু কাঠামো, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা কেন্দ্র) । এটা পৃথিবীর বড় স্তুপাগুলোর অন্যতম এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট । এই স্তুপার পাশ দিয়েই তিব্বত থেকে কাঠমুন্ডু আসার প্রাচীন বাণিজ্য পথটি অবস্থিত । তিব্বতের বণিকরা কয়েক শতাব্দি ধরে এই পথে আসার সময় এই স্তুপায় বিশ্রাম নিতো এবং প্রার্থনা করতো । স্তুপাটি সোনায় মোড়ানো ।

 স্তুপাটিকে ঘিরে অনেকগুলো রকমারি নেপালি জিনিসপত্রের দোকানপাট গড়ে উঠেছে । এখানে প্রচুর ইউরোপিয়ান টুরিস্ট দেখতে পেলাম ।বৌদ্ধনাথ স্তুপার পাশেএরপর আমরা গেলাম পশুপতিনাথ মন্দির । এটা হিন্দু মন্দির- পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এবং পবিত্র শিব (পশুপতি) মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি । বাগমতি নদীর দুইপাড় জুড়ে মন্দির এবং তার আশেপাশের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো অবস্থিত । এটাও একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট । মন্দিরটি নেপালি প্যাগোডা-স্টাইলের স্থাপনা । দুই স্তরের ছাদ কপারের তৈরি এবং সোনায় মোড়ানো । চারটি প্রধান দরজাই রূপার পাতে আবৃত । নদীর তীরের শ্মশানঘাটে মরদেহ পোড়ানো দেখতে পেলাম । চারপাশেই ছোট ছোট ঘরের মতো কাঠামোর ভিতরে প্রতিটায় একটা করে অনেকগুলো শিবলিঙ্গ দেখতে পেলাম । আমি এক সারিতে এগারটা পর্যন্ত গোনতে পারলাম । অনেক সাধু দেখতে পেলাম বিভিন্ন স্থানে বসে আছে, যারা আমাদেরকে তাদের ছবি তুলতে দিচ্ছিল না ।পশুপতিনাথ মন্দিরদেখতে দেখতে দুপুর হয়ে এলো । আমরা কাছের এক রেস্তোরায় নেপালি ডাল-ভাত খেয়ে নিলাম ।এখান থেকে আমরা গেলাম কাঠমুন্ডু দরবার স্কোয়ার । পুরো কাঠমুন্ডু উপত্যকায় এরকম তিনটি দরবার স্কয়ার রয়েছে, যার প্রতিটিই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত ।

দরবার স্কয়ারটি অনেকগুলো সুদৃশ্য স্থাপনা নিয়ে গঠিত । এখানে মাল্লা এবং শাহ রাজাদের প্রাসাদ রয়েছে । সর্বশেষ ২০০১ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রের সিংহাসন অধিগ্রহণ অনুষ্ঠান এখানেই সম্পন্ন হয় ।কাঠমুন্ডু দরবার স্কোয়ারদিনের শেষে আমরা গেলাম শয়ম্ভুনাথ মন্দির ।এই মন্দিরে অনেক বাঁদর রয়েছে । এগুলোকে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয় । এর অপর নাম তাই বাঁদর মন্দির (Monkey Temple) । মন্দিরটি একটি পাহাড় চূড়ার উপর অবস্থিত । বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটা সম্ভবত সবচেয়ে পবিত্র স্থান । এখানেও একটা বড় স্তুপা রয়েছে । মন্দির ঘিরে অনেক দোকানপাট, চারদিকে জমজমাট । স্তুপাটিতে বুদ্ধের চোখ অঙ্কিত । পাহাড় চূড়ায় উঠতে হলে ৩৬৫ ধাপের সিঁড়ি বাইতে হয় । মন্দিরটি পঞ্চম শতকে প্রতিষ্ঠিত হলেও বলা হয়ে থাকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোক এখানে এসে একটি মন্দির নির্মাণ করেন যেটি পরে ধ্বংস হয়ে যায় ।শয়ম্ভুনাথ মন্দিরের বাঁদররাতে আমরা থামেলে ঘোরাঘুরি করলাম ।

থামেলকে বলা যায় কাঠমুন্ডুর নিউমার্কেট । এমন কিছু নেই, যা থামেলে পাওয়া যাবে না । বড় বড় রকমারি দোকান, কফি শপ, বুক শপ, আর কিউরিউ শপ গুলো এখানেই অবস্থিত । রাস্তাঘাটও এখানে আলোকোজ্জ্বল, খুব সুন্দর করে সাজানো । দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা অনেক রাত পর্যন্ত চলে । ভাল হোটেলগুলোও আশেপাশেই রয়েছে । এইবেলা একটা ব্যাপার না বললেই নয়, কাঠমুন্ডু আর পোখরায় সবগুলো হোটেল আর রেস্তোরাতেই দেখলাম ফ্রি ওয়াই-ফাই সার্ভিস রয়েছে । খাবারের অর্ডার দিয়ে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ওয়েব ব্রাউজিং করা যায় । থামেল তো পুরোটাই ওয়াই-ফাই জোন । বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য এই সুবিধাটুকু দেয়া আমার কাছে খুব জরুরি মনে হয়েছে যা আমাদের দেশেও চালু করা উচিত ।  তিব্বতীয় পার্বত্য অঞ্চল...পরদিন বাসে করে আমরা গেলাম কাঠমুন্ডু থেকে ১৫০ কিমি দূরে তিব্বত/চায়না বর্ডারের কাছে ভোটে কোশি নদীর ধারে একটা পিকনিক স্পটে । “ভোটে কোশি” মানে হচ্ছে তিব্বতের নদী (River from Tibet) । এখানে বাঞ্জি জাম্পিং, রেফটিং সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার ব্যবস্থা রয়েছে । আমার সাথের বন্ধুরা বাঞ্জি জাম্প করলো । আমি আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে দেখলাম । নদীর গা ঘেঁষে প্রায় দুই কিমি উঁচু পাহাড় খাড়া উঠে গেছে । এটা নেপালের গভীরতম, সবচেয়ে খরস্রোতা নদী । বেশিরভাগ স্থানেই স্রোত এতো বেশি যে একবার পড়লে সাঁতরে তীরে উঠা প্রায় অসম্ভব । কোথাও কোথাও নদীর স্রোতের গর্জন সমুদ্রের চেয়ে কম নয় । পথে যেতে অনেক সুন্দর ঝরনাধারা চোখে পড়বে । দৃশ্যগুলো এতো সুন্দর আর এতো বেশি প্রাকৃতিক যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই । আমাদের সাথে অনেক দেশি- বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করছিল । তাদের সাথে গল্প আর আড্ডা দিয়ে দিনটা বেশ ভালোই কাটলো ।

পোখরায়...
নেপাল ভ্রমণের চতুর্থ দিনে আমরা একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী পোখরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । কাঠমুন্ডু থেকে পোখরা ২০০ কিমি পথ হলেও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার কারণে এটুকু পথ পার হতে আট ঘণ্টা লেগে গেলো ।  পোখরাতে একটা ছোট বিমানবন্দর আছে, কিন্তু কাঠমুণ্ডু থেকে পোখরার বিমান পথ নাকি বেশ বিপজ্জনক । এমনিতেও পুরো পথ জুড়েই পাহাড়-পর্বত বোঝাই । কাঠমুন্ডুর মতো পোখরাও পর্যটন আর উপত্যকার শহর । পৃথিবীর দশটা সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ার তিনটাই পোখরা শহর ও তার আশেপাশের ত্রিশ মাইলের মধ্যে অবস্থিত । এই গ্রহে মাত্র চৌদ্দটি পর্বতশৃঙ্গ আট কিলোমিটার উচ্চতা অতিক্রম করতে পেরেছে, পোখরা নগরীর গা ঘেঁষে অবস্থিত অন্নপূর্ণা-১ তাদের মধ্যে দশম (আট হাজার ৯১ মিটার)। পোখরা শহরে প্রবেশ করা মাত্র চোখের সামনে অন্নপূর্ণা দেখে কেমন অনুভূতি হয় তা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা বেশ কষ্টসাধ্য । বন্ধু সাফফাত (প্রায় একই সময়পোখরা ঘুরে গেছে, আমি পরে জানতে পেরেছি) এর উক্তি ধার করে বলি- "শেষ বিকেলের সূর্যের আলোয় অন্নপূর্ণার শ্বেতশুভ্র চূড়ার অপার্থিব জ্বলন্ত সৌন্দর্য দেখার অনুভুতি" আসলেই অসাধারণ ।সাথে বোনাস হিসেবে আছে ফেওয়া লেইকের স্বচ্ছ জলরাশি । পোখরাতে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি আমরা সাইক্লিং আর শপিং করলাম । বন্ধুরা প্যারাগ্লাইডিং করলো । আমি অন্ধকার বেট কেইভে (বাদুর গুহা) ঢুকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়াটা বেশ উপভোগ করলাম ।নাগরকোটে...দুই রাত পোখারায় কাটিয়ে আমরা আবার কাঠমুন্ডু ফিরে এলাম । একদিন পরেই আমরা নাগরকোটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম । পথে ভক্তপুর দরবার স্কোয়ারে ঘুরলাম । কাঠমুন্ডু থেকে এটা মাত্র ১৩ কিমি দূরে । বেশ বড় একটা এলাকা জুড়ে দরবার স্কোয়ারটি অবস্থিত এবং চারটি পৃথক স্কোয়ারের নিয়ে পুরোটা গড়ে উঠেছে । এখানের প্রতিটি ভবনই অত্যন্ত সুদৃশ্য, তবে ১৯৩৪ সালের বড় ভূমিকম্পে বেশিরভাগ স্থাপনাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জায়গাটা বেশ খোলামেলা দেখায় । কিয়ানু রিভস অভিনীত Little Buddha নামের ১৯৯৩ সালের হলিউডের ছবিটির কিছু অংশ এখানেই শুট করা হয়েছিল ।এইদিন নেপালে বলিদান হচ্ছিল । আমরা সেটাও বেশ উপভোগ করলাম । কিন্তু এই উপলক্ষে কোনো গাড়ি না চলায় আমাদের নাগরকোট যাওয়া বেশ অসুবিধা হয়ে গেলো । তারপরেও অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে আরও ২০ কিমি দুরের নাগরকোট ঘুরে এলাম । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফিট উঁচু এই স্থান থেকে মাউন্ট এভারেস্টের বেশ ভাল ভিউ পাওয়া যায় । দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদিন দুপুর থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি থাকায় আমরা মেঘ ছাড়া তেমন কিছু দেখতে পেলাম না । তাও এই ছোট গ্রামটির পাহাড়ি পরিবেশ আর নিরবতা আমাকে মুগ্ধ করলো ।আমরা এতোই উঁচুতে ছিলাম যে একদিকে মেঘ আমাদের নিচে ভেসে বেড়াচ্ছিল । বিকালে কাঠমুন্ডু ফিরে এলাম । এদিকে বৃষ্টি আর থামল না, পরের দুইদিনও হতে থাকলো । এরই মাঝে কাঠমুন্ডুতে এদিক-সেদিক কিছু ঘোরাঘুরি করে নিলাম ।

ফেরা...
দেখতে দেখতে ফিরতি ফ্লাইটের সময় চলে আসলো । কিন্তু বিমানের কিছু যান্ত্রিক গোলযোগ আর আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকার কারণে আমাদের ফ্লাইট প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিলম্ব হলো । তারপরেও শেষ পর্যন্ত কোরবানির ঈদের আগের দিন দেশের মাটিতে পা রাখতে পারলাম । প্রিয় দেশ, বাংলাদেশ, যার কোনো তুলনা হয় না । নতুন দেশ দেখার আনন্দ নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঘরে ফিরলাম ।

মঙ্গলবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৫

কষ্ট

তোর জন্য আমি আর কাঁদিনা...
কাঁদলেও চোখের পানি ঝরেনা...

পানি ঝরলেও কষ্ট পাইনা...
কষ্ট পেলেও তোকে আর ভালোবাসিনা...

ভালোবাসলেও আরতোকে বলবোনা...
জানি বললেও তুই শুনবিনা....
শুনলেও তোর কিছু আসে যায়না...


?? প্রশ্ন ??

আকাশ কেন নীল?
গাছের পাতা সবুজ কেন?

 স্বচ্ছ কেন ঝিল?
বাতাস কেন বয়?

উঁচু উঁচু পাহাড় কেন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়?
কুসুম কেন ফোটে?

নদী কেন তুমুল বেগে সাগর পানে ছুটে?
গুহা কেন ফাঁপা?

আকাশটাকে ফিতা দিয়ে যায় না কেন মাপা?
তারা কি যায় গোনা?
পানির যদি স্বাদ না থাকে,

 সাগর কেন লোনা?
অাঁধার কেন কালো?
হুড়মুড়িয়ে পালায় কোথায়,

 প্রদীপ যখন জ্বালো?
আগুন কেন পোড়ায়?

মরুর দেশেও বরফ কেন জমে পাহাড় চূড়ায়?
মেঘেরা ক্যান উড়ে?

বর্ষাকালে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি কেন পড়ে?
মাথা কি তবে ফাঁকা?

বুদ্ধিগুলো মাইক্রোস্কোপে যায় না কেন দেখা?
গরজে কেন নাক?

দাদীর মাথা ঝাঁকড়া চুলো,
দাদার কেন টাক?

জবাব পাবো কই?

সবাই বলে জানতে হলে পড়তে হবে বই।